একটি প্রফেশনাল ও আকর্ষণীয় সিভি চাকরিদাতার নজর কাড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার সিভিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই থাকা উচিত:
১. ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)
- নাম
- যোগাযোগের ঠিকানা
- ফোন নম্বর
- ইমেইল আইডি
- লিঙ্কডইন প্রোফাইল (যদি থাকে)
২. পেশাগত সারসংক্ষেপ (Professional Summary)
- আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- চাকরিদাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূল তথ্য
৩. কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা (Work Experience)
- পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম
- চাকরির শিরোনাম
- কাজের সময়কাল
- প্রধান দায়িত্ব ও অর্জনসমূহ
৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education)
- ডিগ্রির নাম
- প্রতিষ্ঠান
- পাশের বছর
- ফলাফল (যদি প্রাসঙ্গিক হয়)
৫. দক্ষতা (Skills)
- টেকনিক্যাল স্কিল (যেমন: MS Office, Graphic Design, Coding ইত্যাদি)
- সফট স্কিল (যেমন: যোগাযোগ দক্ষতা, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান দক্ষতা ইত্যাদি)
৬. প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন (Training & Certifications)
- প্রাসঙ্গিক কোর্স ও সার্টিফিকেট
- প্রশিক্ষণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
৭. ভাষাগত দক্ষতা (Language Proficiency)
- কোন কোন ভাষায় দক্ষ তা উল্লেখ করুন
৮. প্রকল্প ও গবেষণা (Projects & Research) [যদি প্রাসঙ্গিক হয়]
- গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বা গবেষণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
৯. অতিরিক্ত কার্যক্রম (Extracurricular Activities)
- স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ
- লিডারশিপ রোল
১০. রেফারেন্স (References)
- দু’জন পেশাদার ব্যক্তির নাম, পদবি ও যোগাযোগের তথ্য (যদি প্রয়োজন হয়)
একটি আকর্ষণীয় ও গোছানো সিভি তৈরি করতে এই বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন, যা আপনাকে পেশাগত জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে!
একটি আকর্ষণীয় ও গোছানো সিভি ডাউনলোড করুন
সিভির সাথে কি কি জমা দিতে হয়?
সিভির সাথে সাধারণত কিছু অতিরিক্ত নথি জমা দিতে হতে পারে, যা চাকরিদাতার চাহিদা ও আবেদনকৃত পদের ওপর নির্ভর করে। নিচে প্রয়োজনীয় নথিগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
১. কভার লেটার (Cover Letter)
- আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
- কেন আপনি এই চাকরির জন্য উপযুক্ত, তা ব্যাখ্যা করা
২. জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি (NID/Passport Copy)
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ও কিছু কর্পোরেট চাকরির জন্য প্রয়োজন হয়
৩. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (Educational Certificates)
- এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স বা সমমানের ডিগ্রির সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
৪. প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন (Training & Certifications)
- যদি আপনার কোনো প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ বা সার্টিফিকেট থাকে
৫. কর্মসংস্থান প্রমাণপত্র (Experience Certificate) [যদি প্রযোজ্য হয়]
- পূর্ববর্তী চাকরির অভিজ্ঞতা প্রমাণ করার জন্য কোম্পানির ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট
৬. নমুনা কাজ বা পোর্টফোলিও (Work Samples/Portfolio) [সৃজনশীল পেশার জন্য]
- গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির জন্য দরকার হতে পারে
৭. প্রশংসাপত্র (Recommendation Letter) [যদি প্রয়োজন হয়]
- পূর্ববর্তী কর্মস্থল বা শিক্ষকের সুপারিশপত্র
৮. রেফারেন্স (References)
- দুজন পেশাদার ব্যক্তির নাম, পদবি ও যোগাযোগের তথ্য
কোনো চাকরির আবেদন করার আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে দেখে নিন, যাতে নির্দিষ্ট কোনো অতিরিক্ত নথির প্রয়োজন হলে তা জমা দিতে পারেন।
জীবনবৃত্তান্তে কি ছবি ব্যবহার করা উচিত?
জীবনবৃত্তান্তে (CV) ছবি ব্যবহার করা উচিত কি না, তা নির্ভর করে কিছু বিষয় ওপর:
যখন ছবি ব্যবহার করা উচিত:
চাকরিদাতার চাহিদা অনুযায়ী – যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছবি সংযুক্ত করার কথা উল্লেখ থাকে।
ক্লায়েন্ট বা ভিজ্যুয়াল ইম্প্রেশন দরকার হয় – যেমন মডেলিং, অভিনয়, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিস বা জনসংযোগ সংশ্লিষ্ট চাকরিতে।
কিছু দেশে বাধ্যতামূলক – যেমন বাংলাদেশ, ভারত, জার্মানিতে সাধারণত ছবি সংযুক্ত করা হয়।
যখন ছবি ব্যবহার না করাই ভালো:
কিছু আন্তর্জাতিক নিয়োগ নীতিতে নিষিদ্ধ – যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায় সাধারণত সিভিতে ছবি সংযুক্ত করার প্রয়োজন নেই।
ATS (Applicant Tracking System) সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে – কিছু কোম্পানির স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ছবি বিশ্লেষণ করতে পারে না, তাই সিভি স্ক্যানিংয়ে সমস্যা হতে পারে।
বৈষম্য বা পক্ষপাত এড়ানোর জন্য – কিছু চাকরিদাতা প্রার্থীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে চান, তাই ছবি না থাকাই ভালো হতে পারে।
যদি ছবি ব্যবহার করেন, তাহলে কীভাবে করবেন?
পেশাদার ছবি – হালকা রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে, ভালো মানের পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
স্মার্ট পোশাক – ফরমাল বা সেমি-ফরমাল পোশাক পরা ভালো।
সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকা – হাসিমুখে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে ছবি তোলা উচিত।
সঠিক ফরম্যাট ও সাইজ – সাধারণত ৩০০x৩০০ পিক্সেল বা ২x২ ইঞ্চি ছবি ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত ছবি সংযুক্ত করাই ভালো। তবে বিদেশি চাকরির ক্ষেত্রে বা প্রযুক্তি ও গবেষণাভিত্তিক চাকরিতে ছবি না থাকলেও সমস্যা নেই।
ক্যারিয়ার সামারি কীভাবে লিখতে হয়?
ক্যারিয়ার সামারি (Career Summary) সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে সংক্ষেপে আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ক্যারিয়ার লক্ষ্য তুলে ধরা হয়। এটি সাধারণত ৩-৫ লাইনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হয় এবং নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাহায্য করে।
ক্যারিয়ার সামারি লেখার ধাপসমূহ:
১. আপনার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন
আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ দিন। যেমন – “৩ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ…”
২. মূল দক্ষতা বা বিশেষজ্ঞতা উল্লেখ করুন
যে দক্ষতাগুলো আপনাকে আলাদা করে তুলবে, সেগুলো তুলে ধরুন। যেমন – “SEO, Facebook Ads, ও কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে দক্ষ…”
৩. আপনার অর্জন বা অবদান উল্লেখ করুন
সংক্ষেপে এমন কিছু বলুন, যা আপনাকে যোগ্য প্রমাণ করবে। যেমন – “২৫টির বেশি সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনার অভিজ্ঞতা…”
৪. আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্য সংক্ষেপে বলুন
আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী, তা ১ লাইনে প্রকাশ করুন। যেমন – “একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি আনতে আগ্রহী।”
উদাহরণসমূহ:
ডিজিটাল মার্কেটার:
“৩ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ, যিনি SEO, Facebook Ads ও কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে দক্ষ। ২৫টির বেশি সফল ক্যাম্পেইন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটি ডাটা-ড্রিভেন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আগ্রহী।”
গ্রাফিক ডিজাইনার:
“সৃজনশীল ও ফলাফলমুখী গ্রাফিক ডিজাইনার, যার ৪ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্র্যান্ডিং ও ভিজ্যুয়াল ডিজাইন নিয়ে। Adobe Illustrator ও Photoshop-এ বিশেষ পারদর্শী। ইনোভেটিভ ডিজাইন তৈরি করে ব্র্যান্ডের ভিজিবিলিটি বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আইটি প্রফেশনাল:
“৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওয়েব ডেভেলপার, যিনি React.js ও Node.js-এ দক্ষ। বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য ৫০টিরও বেশি ওয়েব অ্যাপ তৈরি করেছেন। কাস্টম ওয়েব সল্যুশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে আগ্রহী।”
টিপস:
সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট রাখুন (৩-৫ লাইন যথেষ্ট)
মূল দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা হাইলাইট করুন
পরিসংখ্যান বা সংখ্যা ব্যবহার করুন (যদি সম্ভব হয়)
কপি-পেস্ট না করে নিজস্ব স্টাইলে লিখুন
এইভাবে লিখলে আপনার ক্যারিয়ার সামারি আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী হবে!